Posts

অসম্ভ্রম অন্ধকার

 রাতের খাওয়া সাঙ্গ হলে দ্রুততার সাথে মশারীর ঘরে ঢুকে যাই। বাতিটা নিভিয়ে দিয়ে—চায়ের কাপটা বালিশের পাশে আপাতত থাক, এখন আলস্য শোষণ করেছে শক্তি। চশমাও থাক, আঁধারে মূর্ত পৃথিবীর দেখবার নেই কিছু। নাছোড়বান্দা মশাগুলো মশারীর গায়ে অবিরাম ঢুঁস দিয়ে চলে। পিনপিন সুর—কি কথা বলে?  আমি এখন অবচেতনায় সওদাগরি হয়ে ঘুরে আসি প্রাচীন কোনো গুহায় যেখানে আমার জন্মের বীজ রোপিত হয়েছিলো। মনোহর অন্ধকার চিরদিন মানুষের উদ্দীপনা যুগিয়েছে। ক্ষান্ত শব গুলো ঘুমের বাসনে আশ্রয় নিয়েছে। ঘুমের উমে পেয়েছে অবিরাম স্বপ্ন। স্বপ্নের নির্যাস ভুলিয়ে দিয়েছে কাল। অবচেতনার ঘোরে সওয়ারী হয়ে ঘুরে এসেছি বদরের প্রান্ত, ট্রয়। বারবার আমাকে ধ্বংস করতে চেয়েছে নীল আলো। গলায় ক্ষুর চেপে ধরেছে বোবা ঘোড়া। বহু বাড়ি-ঘর-শহর-শরীর ছুঁয়ে বহু দূরের ধুলোবালি নিয়ে অবশেষে উত্তুরে হাওয়া আমার ঘরে আসে। পুরাকাল থেকে সে আসে সাক্ষ্য প্রমাণ নিয়ে৷ অন্ধকার কেটে কেটে চলে যায় সময়ের উত্তরতম কোণে। যেখানে গিয়ে ক্লান্ত বাতাস অবশেষে লুটিয়ে পড়বে—যখন জানবে দূত সতর্কবার্তা নিয়ে ফিরে আসার আগেই রাজার মৃত্যু হয়েছে। পৃথিবী নিমজ্জিত হবে বন্ধ্যা অন্ধকারে। যে অন্ধকারে আমরা একেকবার বী

দূরের একটি দ্বীপ

 এক বিকেল বেলা তুমি রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে। ডানে বামে বারেবারে অধীর বৃষ্টিপাতে উতলা হয়ে উঠেছো। সেই রাস্তার একমাত্র রিকশাটিতে আমি চড়ে বসে আছি অজান্তে। আমি এখন এই রাস্তা দিয়ে যাবো অথবা তুমি এখন এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করবে এসব আটপৌরে ব্যক্তিগত জীবন জানাজানি থেকে আমরা বহুদূর চলে গেছি। এরচেয়ে বেশি যদি বলি, তুমি এখন কেমন আছো অথবা আমি এখন কোথায় থাকি এসব দৈনন্দিন তথ্যও আমাদের আর জানা থাকে না। এরচেয়েও যদি বেশি বলি, আমরা পরস্পরের দিকে আলগোছে তাকানো মাত্র অথবা দূর থেকে ছায়াচ্ছন্ন অবয়ব দেখেই চিনে ফেলতে পারি না। রাস্তার অচেনা একটি মুখের মতোই তাকাই প্রথমে, তারপর কাটে একটি মুহূর্ত, অতল স্মৃতির গহ্বরে গিয়ে হঠাৎ ঠাউর হয়। আরে!  তারপর কি হয়?  তারপর তোমার কি হয়? বুকের ভেতরটা কি মোচড় দিয়ে উঠে? উথালপাতাল একটা ঢেউয়ে দুলতে থাকে হৃদয়খানি? তুমুল জলোচ্ছ্বাসে সব স্মৃতি এসে হানা মারে? ঝড় এসে তোমাকে আছড়ে ফেলে দিতে চায় মাটিতে? চোখ ভর্তি বানের পানি আসে কি?  নাকি একটি রিকশা না পাওয়ার যাতনায় চোখ বুজে আসে ক্লান্তিতে? শুধু মনে পড়ে এই মুখ কতো চেনা ছিলো একদিন, এখন এই ময়লা জুতো পায়ে ঘুরে? টিশার্ট ছেড়ে পাঞ্জাবী
তোমার পৃথিবীটা ঘুরে, ঘুরে নাকি অতীত? পাপ ঘুরে ঘুরে পাপীকে খায়, পুন্যটা ঘুরে শ্মশানে যায় ইতিহাস নাকি চক্কর কেটে ঘুরে ফিরে আসে  দুলালির ঘরে তারা খাঁড়া বাড়া নিয়ে ঢোকে গণিকার স্তনে হাত ঘুরে, ঘুরে প্রেয়সীর নাভী ছুঁয়ে বছর একটাই নাকি নতুন বছর হয়ে ঘুরে, ঘুরে আসে মাস ঋতু তোমাদের হাগা খাওয়া ঘুরে ঘুরে একই কাজে দিন সারা ঘুরে ঘুরে একই সরকার পোঁদমারা দিতে আসে দেশে তোমরা সবাই নাকি ঘুরে ঘুরে পাছা পাতো কালো পাছা চ্যাপ্টা চাল ডাল দাম বাড়ে পকেটে দুলালির যোনীপথ  বড় ফাঁক ছিন্নভিন্ন দুর্ভিক্ষের শঙ্কায় মাথা ঘুরে পুরনো সুর সেই পুরনো ঈশ্বর এখনো ঘুরে, ঘুরে প্রভাতফেরীর পুরনো শহীদ ঘুরে ঘুরে নাকি একই উপগ্রহ ছ্যাচড়া চাঁদ মাথার উপর পিতা আকাশ হয়ে থাকে, আকাশ-ও তো ভেঙে পড়ে। তোমরা নাকি ঘুরে ঘুরে একই মানুষ বামন মানুষেরা জননাঙ্গের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ঘরদোর ভরে ফেলো প্রত্যাখ্যানের চক্রে ঘুরে ঘুরে কেউ সামনে কেউ পিছনে গরিবের থালা বড়লোকের গাড়ির চাকা সব ঘুরে ঘুরে নাকি বদলায় হাত শালা পুনর্জীবন শালা পরকাল। আমি বরং সোজা রাস্তায় ছুটি লাল ধুলাবালির রাস্তায় ঝড় তুলি চোখে গাঢ় অন্ধকার, গলায় চিৎকার আলিবালি গান।  ১৭ মার্চ, একুশ ময়মনসিংহ